বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ০৯:২৯
রাশিয়া-ইরানকেই ট্রাম্পের ‘নতুন সাম্রাজ্যবাদ’ মোকাবিলা করতে হবে

রুশ দার্শনিক ও চিন্তাবিদ অ্যালেক্সান্ডার দুগিন মনে করেন, বিশ্ব এক-মেরুকেন্দ্রীক ব্যবস্থা থেকে বহু-মেরুকেন্দ্রীক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইরান ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোকেই এই ঐতিহাসিক ক্রান্তি-লগ্নের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: সম্প্রতি ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা সাহাব নেটওয়ার্কের রুশ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ট্রাম্পের ক্ষমতা ফিরে পাওয়া, নতুন বহুজাতিক ব্যবস্থায় ইরান ও রাশিয়ার অবস্থান এবং মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসব কথা বলেন। 

মার্কিন কৌশলগত নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসার কথা তুলে ধরে দুগিন মত প্রকাশ করেন, লিবারেলিজম বা কথিত উদারনৈতিকতাবাদ ও বিশ্বায়ন-ভিত্তিক মার্কিন একাধিপত্য বা কর্তৃত্বকামীতার অবসান ঘটেছে। সাংস্কৃতিক প্রভাব খাটানো, স্বাধীন দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করা ও প্রচারণা-ভিত্তিক কৃত্রিম বিপ্লব বা রঙিন বিপ্লবগুলোকে নেপথ্য থেকে পরিচালনা করা এসবের পরিবর্তে এখন যে নতুন কৌশল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বেছে নিয়েছে, তা হলো- এক ধরনের সাম্রাজ্যবাদী-জাতীয়তাবাদ। এ পর্যায়ে ওয়াশিংটন বিশ্বের নেতা সেজে নয় বরং এক স্বতন্ত্র সাম্রাজ্য হিসেবে নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

দুগিন মনে করেন, ট্রাম্প এখন বিশ্ব-ব্যবস্থার নতুন সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার নামে এবং বিশ্বায়নকামী নীতিগুলো পরিত্যাগের মাধ্যমে। এর অর্থ প্রথাগত জোটবদ্ধতার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ও বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি মার্কিন পেশী-শক্তি প্রদর্শন করার নতুন কৌশল প্রয়োগ করছে ওয়াশিংটন। 

এ অবস্থায় রাশিয়া ও ইরান দুই স্বাধীন শক্তি হিসেবে পশ্চিমা আধিপত্যবাদের কারণে অতীতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে মার্কিন কৌশল পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানা সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করেন দুগিন। 

তার মতে, ট্রাম্প অতীতের মতোই ইরানবিরোধী নীতি অব্যাহত রাখলেও তেহরানকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে তার কৌশল হবে বাইডেনের কৌশলের চেয়ে ভিন্ন। ডেমোক্রেট দলীয় প্রশাসনের ‘পর্যায়ক্রমিক ক্ষয় সাধন’ কৌশলের বিপরীতে ট্রাম্প সরাসরি ও দ্রুত চাপ দেওয়ার নীতি ব্যবহার করতে চাইবেন। 

দুগিন বলেন, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে ইসরাইল আগের মতই প্রাধান্য পাবে। ফলে ইরান ও প্রতিরোধ অক্ষের ওপর মার্কিন চাপ বাড়তেই থাকবে। তবে ট্রাম্পের ডানপন্থি সহযোগী গ্রুপগুলোর ভেতরে ইসরাইলকে লাগামহীন ও নিঃশর্ত সাহায্য দেওয়ার বিরোধী প্রতিবাদী কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে। 

দুগিন তার বক্তব্যে ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত ঐক্যকে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম প্রধান ভূরাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এই ঐক্য সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেছেন। 

তার মতে, ইরানের উচিৎ রাশিয়ার পারমাণবিক ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়া এবং বিনিময়ে রাশিয়া এ অঞ্চলে ইরানের ভূ-রাজনৈতিক সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে- পারস্য উপসাগর ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা। 

দুগিনের মতে, রুশ-ইরান ঐক্যের এ বিষয়টি কেবল কৌশল হিসেবেই জরুরি নয়, বরং এক নতুন সভ্যতার ভিত্তি গড়ার কাজেও পশ্চিমা চাপগুলো ঠেকানোর জন্য জরুরি।  

তিনি এ সময় ফিলিস্তিন ও গাজার সাম্প্রতিক ঘটনা-প্রবাহ সম্পর্কে বলেন, এই সংঘাত বিশ্বে ইসরাইল সম্পর্কে অতীতের যে ধারণা ছিল তা বদলে দিয়েছে। ইসরাইল গত কয়েক দশকে নিজেকে নির্যাতিত বা মজলুম হিসেবে তুলে ধরতে সফল হয়েছিল। কিন্তু গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর ইসরাইলের নির্বিচার গণহত্যা সেই চিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং বিশ্ব-জনমত এখন ইসরাইলের বিপক্ষে। আর এটাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় পরাজয় এবং এর ফলে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সরকারের প্রথাগত সহায়তাও নতুন নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। 

একই সঙ্গে বহুমেরু-কেন্দ্রীক এক নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী দুগিন। যে ব্যবস্থায় একক মার্কিন আধিপত্যের পরিবর্তে চীন, রাশিয়া, ইরান ও ভারতের মতো দেশগুলোরও আগের চেয়েও জোরালোভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

আর এই নয়া বিশ্ব-ব্যবস্থা লিবারেলিজম-ভিত্তিক সভ্যতার মোকাবিলায় এক নতুন সভ্যতা গড়ে তুলবে বলে মনে করেন এই রুশ দার্শনিক ও চিন্তাবিদ।

সূত্র: তাসনিম নিউজ

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha